বুকে গুলি
ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায় শিহাবের
নিউজ আপডেট
ডেস্ক: ৪ আগস্ট
২০২৪
জুমার নামাজ
শেষে বাসায় দুপুরের খাবার খেয়ে কারখানাতে যাওয়ার সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ
হয়ে মারা যান ফার্নিচার কর্মচারী হৃদয় আহমেদ শিহাব (১৮)। গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) দুপুরে
ঢাকার বাড্ডায় কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন শিহাব।
শিহাব
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামের শাহ আলম হাওলাদারের ছেলে। শিহাবের পরিবারে মা-বাবা ও
এক বোন রয়েছে।
নিহত
শিহাবের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, আদরের একমাত্র সন্তান হারিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা নাছিমা বেগম।
শোকে বাকরুদ্ধ বাবা নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকছেন ঘরের এক কোণে। একমাত্র
ভাইকে হারিয়ে আর্তনাদ করছেন বোন। শোকে আচ্ছন্ন স্বজন-প্রতিবেশী। বাড়ির পাশের কবরস্থানে এসে ভিড় করছেন স্বজনেরা। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে প্রলাপ বকছেন দাদা রফিক হাওলাদার।
জানা
গেছে, প্রায় ৮ বছর আগে
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কাঁধে আঘাত পান শিহাবের বাবা শাহ আলম হাওলাদার। এরপর থেকে ভারী কোনো কাজ করতে পারতেন না তিনি। এর
মধ্যে আবার হার্টে সমস্যা দেখা দেয় তার। এক মেয়ে ও
এক ছেলেকে নিয়ে নাছিমা বেগমের সংসারে তৈরি হয় আর্থিক সংকট।
সংসারের হাল ধরতে সেলাইয়ের কাজ করতে বাধ্য হন স্ত্রী নাছিমা
বেগম। পরে কোনো মতে চলতে থাকে সংসার। তখন একমাত্র ছেলে হৃদয় আহমেদ শিহাব অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। সংসারের হাল ধরতে তাকে ঢাকায় একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজে পাঠিয়ে দেন দরিদ্র এই দম্পতি। ফার্নিচারের
দোকানে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করতো শিহাব। বেতন যা পেত নিজের
খরচ রেখে বাড়িতে বাকি টাকা পাঠিয়ে দিতেন শিহাব।
স্থানীয়
বাসিন্দা ও পারিবারিক সূত্রে
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার বাড্ডার লিংকরোড এলাকায় শিহাবের ফুপাতো ভাই মনির মোল্লার “হাসান স্টিল অ্যান্ড ফার্নিচার” এ কাজ করতো।
১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজে আদায় করে মনির মোল্লার বোনের বাসায় দুপুরের খাবার খেতে যান শিহাব। পরে খাবার শেষ করে কারখানাতে যাওয়ার সময় রাস্তা পার হতে গেলে টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় সড়ক।
এ
সময় একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় শিহাবের শরীরে।
পরে খবর পেয়ে ফার্নিচার দোকানের মালিক ফুপাতো ভাই মনির মোল্লা স্থানীয় এক হাসপাতালে গিয়ে
শিহাবকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে বনশ্রী
এলাকার নাগরিক স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঐদিন
রাতে গ্রামের বাড়ি শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীর চর ইউনিয়নের রাজারচর
আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামে মরদেহ এসে পৌঁছালে শোকের মাতম ওঠে পরিবার জুড়ে। পরে ২০ জুলাই শনিবার
কবরস্থানে দাফন করা হয় শিহাবকে।
শিহাবের
ফুপাতো ভাই মনির মোল্লা বলেন, শিহাব আমার দোকানে কাজ করতেন। দুপুরে খাবার খেয়ে কারখানায় ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। বুকের
এক পাশে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায় তার। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভর্তি করতে চায়নি কোনো হাসপাতাল! চোখের সামনেই সব শেষ হয়ে
গেল। হাসপাতালে চিকিৎসা পায়নি।
কান্নাজড়িত
কণ্ঠে নিহত শিহাবের মা নাছিমা বেগম
বলেন, আমার ছেলে জুমার নামাজ শেষে দুপুরে খাইয়া কারখানায় যাইতেছিল। ওই তো ছোট
মানুষ, ওই তো আন্দোলন
করে নাই। ওরে কেন গুলি কইরা মারলো? আমার একমাত্র ছেলে! আমি এখন কি নিয়া বাঁচমু।
আমার বাবার কাছে আমারে নিয়া যাও।
নিহত
শিহাবের চাচা সাহাবুদ্দিন হাওলাদার বলেন, আমাদের পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান ছিল শিহাব। আমার বড় ভাইয়ের ছেলে।
তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিল শিহাব।
শোকে
বাকরুদ্ধ বাবা নিশ্চুপ শাহ আলম হাওলাদার। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলেতো কোনো আন্দোলন করে নাই ও দোকানে যাচ্ছিল।
আমার ছেলের কি অপরাধ ছিল?
ওরে কেন গুলি কইরা মারল? বাবা হয়ে সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়ার কষ্ট কাউকে বলে বুঝাতে পারব না। সন্তানের মরদেহ কাঁধে নেব, তা কখনও ভাবিনি।
কিন্তু কেন আমার সন্তান গুলিতে মারা গেল। তার কি কোনো বিচার
পাব?
সন্যাসিরচর
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কহিনুর হাওলাদার বলেন, নিহত শিহাব কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। গত ২০ জুলাই
রাতে জানাজা শেষে তাকে কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিহাবের মৃত্যুর বিষয়টিকে দুঃখজনক। আমি খোঁজখবর নিয়েছি। সবকিছু স্বাভাবিক হলে ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। তাছাড়া তারা চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা করা
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন