যেমন হবে কুরবানির পশু
নিউজ ডেস্ক,১০.৬.২০২৪
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ। আগামী ১৭ জুন অনুষ্ঠিত হবে কুরবানি। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু জবাহের মাধ্যমে কুরবানি আদায় করতে হয়। কুরবানির জন্য উপযোগী পশু দিয়ে কুরবানি করতে হয়।
সব
পশু দিয়ে কুরবানি আদায় হয় না। আবার
যেসব পশু দিয়ে কুরবানি করতে হয়, তা হতে হবে
নিখুঁত। পশু কেনার আগে যেসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি সংক্ষেপে তা তুলে ধরা
হলো-
যে পশু কুরবানির জন্য উপযোগী
উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ। তবে তা হতে হবে মানুষের গৃহপালিত পশু। এ ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন- হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানি করা বৈধ নয়। (বাদায়েউস সানাঈ)
নর
ও মাদা পশু
যেসব
পশু দ্বারা কুরবানি বৈধ, সেসব পশুর নর ও মাদা
উভয়টি দিয়েই কুরবানি করা বৈধ। সুতরাং নর ও মাদা
উভয় পশু দিয়ে কুরবানি করা যায়। ' (বাদায়েউস সানাঈ)
১.
উট: কমপক্ষে ৫ বছর হতে
হবে।
২.
গরু ও মহিষ: কমপক্ষে
২ বছরের হতে হবে।
৩. ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা: কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে।
তবে
ভেড়া ও দুম্বা ১
বছরের কিছু কম হলেও চলবে
তবে তা দেখতে হৃষ্টপুষ্ট
হতে হবে। তা দেখতে যেন
১ বছরের মতো মনে হয়। এমন হলে কুরবানি করা বৈধ। তবে ৬ মাসের কম
হলে হবে না। আর ছাগলের বয়স
১ বছরের কম হলে কোনো
অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানি
বৈধ নয়। ' (বাদায়েউস সানাঈ)
পশুতে
অংশীদারের সংখ্যা
উট, গরু, মহিষ: সর্বোচ্চ ৭ জন শরিক হয়ে কুরবানি দেয়া যাবে। এ পশুগুলো একাকিও কুরবানি করা যাবে। এককভাবে কুরবানি করাই উত্তম। এ পশুগুলোতে সাতের অধিক ব্যক্তি শরিক হলে তা দ্বারাও কুরবানি আদায় হবে না।
ছাগল,
ভেড়া বা দুম্বা: এ
পশুগুলোর যে কোনোটিই সর্বোচ্চ
একজনের দ্বারা কুরাবানি করা বৈধ। এ পশুগুলোর একটি
দিয়ে একাধিক ব্যক্তি কুরবানি করতে পারবে না। যদি একাধিক ব্যক্তি এ পশুগুলো দিয়ে
কুরবানি করে তবে তার কুরবানি আদায় হবে না। ' (মুয়াত্তা মালেক, মুসলিম, বাদায়েউস সানাঈ)
কুরবানির
উত্তম পশু
যেসব
পশু দিয়ে কুরবানি করা যায়, সেসব পশুর মধ্যে হৃষ্টপুষ্ট এবং দেখতেও সুন্দর তা দিয়ে কুরবানি
করা উত্তম। ' (মুসনাদে আহমাদ, বাদায়েউস সানাঈ)
যেসব
পশুতে কুরবানি বৈধ নয়
গৃহপালিত উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানি করা জায়েয। এ পশুগুলোর মধ্যে এমন কিছু খুঁত বা সমস্যা রয়েছে যে কারণে তা দিয়ে কুরবানি বৈধ হবে না। আর তাহলো-
- যে
পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে
রাখতে পারে না বা ভর
করতে পারে না এমন খুত
থাকা পশু দ্বারা কুরবানি বৈধ নয়। (তিরমিজি, আবু দাউদ, বাদায়েউস সানাঈ, রদ্দুল মুহতার)
- এমন
শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান
পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না; তা দ্বারাও কুরবানি
করা বৈধ নয়। ' (তিরমিজি, বাদায়েউস সানাঈ)
- যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না, এমন পশু দ্বারাও কুরবানি করা বৈধ নয়। ' (বাদায়েউস সানাঈ)
- যে
পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশু দ্বারা
কুরবানি বৈধ নয়। (তবে যে পশুর অর্ধেক
শিং বা কিছু শিং
ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে
বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু দিয়ে
কুরবানি করা বৈধ। )' (তিরমিজি, আবু দাউদ, রদ্দুল মুহতার, বাদায়েউস সানাঈ)
- যে
পশুর লেজ বা কোনো কান
অর্ধেক বা তারও বেশি
কাটা সে পশু দ্বারাও
কুরবানি বৈধ নয়। আর যদি অর্ধেকের
বেশি থাকে তাহলে তা দ্বারা কুরবানি
বৈধ। ' তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। ' (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)
- যে
পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ
পুরো নষ্ট সে পশু দ্বারাও
কুরবানি বৈধ নয়। ' (তিরমিজি, বাদায়েউস সানাঈ)
পশু গর্ভবতী হলে
পশু
কেনার পর দোষ দেখলে
কুরবানির
নিয়তে পশু কেনার পর যদি তাতে
এমন কোনো দোষ দেখা দেয়, যে কারণে কুরবানি
বৈধ নয়; তখণ ওই পশু দ্বারাও
কুরবানি বৈধ হবে না। এর স্থলে আরেকটি
পশু কুরবানি করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানি করতে পারবে। (বাদায়েউস সানাঈ, রদ্দুল মুহতার)
পশু বন্ধ্যা হলে
কুরবানির পশু বন্ধ্যা হলেও তা দ্বারা কুরবানি করা বৈধ। (রদ্দুল মুহতার) পশু কুরবানির ক্ষেত্রে বা পশু নির্বাচনের সময় এ বিষয়গুলো দেখে পশু কেনা জরুরি। আর কুরবানির ক্ষেত্রে উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি। অন্যথায় কুরবানি আদায় হবে না।
আল্লাহ
তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার নৈকট্য অর্জনে বৈধ পশু দিয়ে উল্লেখিত শর্ত মেনে কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। কুরবানিকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম বানিয়ে দিন। আমিন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন