টিম ‘মেলোডি’, এক নজরে নরেন্দ্র মোদির 'ভালো বন্ধু' জর্জিয়া মেলোনি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:১৮ জুন ২০২৪
সালটা ১৯৯৬, মাত্র ১৯ বছর বয়স তখন তার। উগ্র দক্ষিণপন্থী এক যুব দলের কর্মী; সামনে একটা ফরাসি টিভি ক্যামেরা। তার সামনে দাঁড়িয়ে সদ্য কৈশোর পেরনো তরুণী জর্জিয়া মেলোনি লুকোছাপার কোনও চেষ্টাই করেননি।
সটান বলে দিয়েছিলেন, 'আমি মনে করি মুসোলিনি খুবই ভাল রাজনীতিক ছিলেন। যা করেছেন, সব ইতালির জন্য করেছেন। গত পঞ্চাশ বছরে আমরা এমন একজন রাজনীতিবদকে পাইনি!'
সটান বলে দিয়েছিলেন, 'আমি মনে করি মুসোলিনি খুবই ভাল রাজনীতিক ছিলেন। যা করেছেন, সব ইতালির জন্য করেছেন। গত পঞ্চাশ বছরে আমরা এমন একজন রাজনীতিবদকে পাইনি!'
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'ভাল বন্ধু' হিসেবে জর্জিয়া মেলোনি এখন আসমুদ্রহিমাচলের সমাজমাধ্যমে রীতিমত ট্রেন্ড করছেন। জো বাইডেন থেকে ঋষি সুনাক, সব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে ভালই সুসম্পর্ক রেখে চলেন মোদি। ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ভ্লাদিমির পুতিন, দু'পক্ষের সঙ্গেই আলোচনায় বসেছেন মোদি। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গেও তার বেজায় ভাল সম্পর্ক। কিন্তু জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে মোদির হৃদ্যতা এর মাঝেও খানিক আলাদা। দুবাইতে গত জলবায়ু সম্মেলনের বৈঠকের ফাঁকে মোদির সঙ্গে সেলফি তুলে মেলোনি দুই রাষ্ট্রনায়কের নামের আদ্যক্ষর মিলিয়ে লিখেছিলেন 'মেলোডি'। তার পর থেকে 'মেলোডি' রীতিমত ভাইরাল। জি৭ বৈঠকে মোদি রওনা হতেই নেটদুনিয়া অধীর আগ্রহে বসেছিল, কখন 'মেলোডি'র দেখা পাওয়া যায়। নেটনাগরিকদের সে আশা মেটাতে এবার রীতিমত একটি ছোট্ট ভিডিও পোস্ট করেছেন মোদি-মেলোনি। সহাস্য মোদির পাশে দাঁড়িয়ে মেলোনি বলেছেন, 'হ্যালো ফ্রম দ্য মেলোডি টিম...' ।
সমালোচকরা অনেকেই বলেন, মেলোনি ও মোদির এই বন্ধুত্বের একটা বড় কারণ, দু'জনের প্রায় একইরকম চিন্তাভাবনা। দুই রাষ্ট্রনায়কই বিশ্বের অন্যতম তাবড় দক্ষিণপন্থী মুখ বলে পরিচিত। দু'জনেই নিজের দেশে প্রবল জনপ্রিয়। এবারে নরেন্দ্র মোদিরর বিজেপির ভোট সামান্য কমে থাকতে পারে। কিন্তু তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে কোনও অসুবিধে হয়নি তার।
১৯৯৮ সালে প্রথম রোম প্রদেশের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন মেলোনি। ২০০২ অবধি ওই পদে ছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে প্রথমবার ইতালীয় সংসদের নিম্নকক্ষ 'চেম্বার অফ ডেপুটি'-তে নির্বাচিত হ'ন মেলোনি। সেবার ভোটে বাম জোটের প্রার্থী রোমানো প্রোডির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে হেরে যান বিখ্যাত মিডিয়া মোগল সিলভিও বার্লুস্কোনি। মাত্র দু'বছরের মধ্যেই অবশ্য অনাস্থা ভোটে সরকার পড়ে যায়। ফের নির্বাচন হয় ২০০৮ সালে। এবারে ক্ষমতায় আসেন বার্লুস্কোনি। মাত্র ৩১ বছর বয়সে সেই সরকারের অধীনে ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স জোটসঙ্গী হিসেবে যুবকল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্ব পান জর্জিয়া মেলোনি। ২০১১ অবধি ওই পদে ছিলেন মেলোনি। প্রধানমন্ত্রীত্বের আগে জীবনে ওই একবারই সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন।
২০১২ সালে প্রথম নিজের দল গড়েন মেলোনি। নাম রাখেন ফ্রাতেল্লি দে ইতালিয়া বা 'ব্রাদার্স অফ ইতালি'। ততদিনে ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স মিশে গিয়েছে বার্লুস্কোনির ফোর্জা ইতালিয়া বা 'ফরোয়ার্ড ইতালি' দলে। ২০০৯ সালের কথা।
এদিকে সমালোচকরা বলেন, মুসোলিনির পরে সম্ভবত ইতালির সবচেয়ে উগ্র দক্ষিণপন্থী মতবাদের আখড়া হয়ে দাঁড়ায় ব্রাদার্স অফ ইতালি। দলের প্রতীকেও মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী দলের ছাপ রয়েছে। অনেকে গাঁইগুঁই করেছিলেন। মেলোনি কান দেননি। অবশ্য তিনি যে আদৌ মুসোলিনির পথের পথিক নন, সেটা জানাতে কোনও কসুর করেন না মেলোনি। বলেন, তাঁর দলের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের কোনও যোগ নেই। তিনি সবার প্রধানমন্ত্রী। ন্যাটো বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে আসা নিয়েও তাঁর বিশেষ উচ্চবাচ্য নেই। সাফ বলে দিয়েছেন, বিদেশনীতির ক্ষেত্রে কোনও বড় বদল তিনি আনবেন না। এদিক দিয়ে তিনি অবশ্য তার পূর্বসুরি বার্লুস্কোনি বা মাতেও স্যালভিনির চাইতে খানিক আলাদা। দু'জনেই রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোর অনুরাগী ছিলেন। মেলোনি সেখানে জি৭ বৈঠকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কিকে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন