কোরবানির আগে মিয়ানমার সীমান্তে বেড়েছে গরু পাচার
নিউজ ডেস্ক. ২০২৪
নাইক্ষ্যংছড়ি
সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসছে গরু-মহিষ। ছবি: সংগৃহিত
খামারিদের অভিযোগ, সীমান্তের ওপারে উত্তেজনা চললেও অদৃশ্য কারণে নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট উন্মুক্ত রয়েছে। বিশেষ করে ঘুমধুম-বাইশফাড়ি, নিকুছড়ি, ফুলতলী, আশারতলী, কম্বনিয়া, ভাল্লুকখাইয়া, বামহাতির ছড়া, দোছড়ি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক গরু আসছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলছে সংঘাত-সংঘর্ষ। এপারে সীমান্ত পরিস্থিতিতে কড়া পাহারায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। তারপরও থেমে নেই অবৈধভাবে গরু-মহিষ পাচার। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক গরু-মহিষ ঢুকছে বাংলাদেশে।
অভিযোগ উঠেছে, বর্তমানে ওপারের
নিয়ন্ত্রণে থাকা আরাকান আর্মির মদদে গরু-মহিষ ছাড়াও মাদকদ্রব্য পাচার করছে চোরাকারবারিরা।
ঈদুল আজহা সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে এই পাচার ব্যাপক হারে বেড়েছে।
চোরা পথে অবাধে গবাদি পশু আসায় কপালে চিন্তার ভায়জ পড়েছে সীমান্ত এলাকার পশুর খামারিদের। অবৈধভাবে আনা এসব পশু বান্দরবান এবং কক্সবাজার জেলা ছাড়াও পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাজারে তোলা হচ্ছে। এতে দেশীয় গরুর খামারিদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন
পয়েন্ট দিয়ে দেদারসে আসছে পাচারের গরু। ছবি:সংগৃহিত
খামারিদের অভিযোগ, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে উত্তেজনা চললেও অদৃশ্য কারণে নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট উন্মুক্ত রয়েছে। বিশেষ করে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-বাইশফাড়ি, নিকুছড়ি, ফুলতলী, আশারতলী, কম্বনিয়া, ভাল্লুকখাইয়া, বামহাতির ছড়া, দোছড়ি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক গরু আসছে এপারে। আর এসব গরু পাচারকে কেন্দ্র করে পথে পথে চলছে চাঁদাবাজি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি এমনকি সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নেমে পড়েছেন এই চাঁদাবাজিতে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি,
মিয়ানমার থেকে গরু পাচার নিয়ে সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে সক্রিয় সশস্ত্র চোরাকারবারিরা।
এই গরু পাচার চক্রের হোতা প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি। তবে তাদের হয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে
নেতৃত্ব দিচ্ছে চক্রের কয়েক শ’ সদস্য।
প্রভাবশালী এই গরু পাচার
চক্র প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে শত শত গরু-মহিষ সীমান্ত দিয়ে অবাধে এনে মজুত করছে গর্জনিয়া
বাজার, চাকঢালা বাজার, ঈদগাঁও, ঈদগড় ও চকরিয়ায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিনি সন্ধ্যা নামলেই সীমান্ত দিয়ে চোরাই গরু আনার তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। এরপর এশার নামাজের পর রাস্তাঘাটে লোকজন কমে গেলে গরুর পাল প্রশাসন ও বিজিবি টহল দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে কারবারিরা।
স্থানীয় শ্রমিক ও খেটেখাওয়া
লোকজনকে দিয়ে প্রতিটি গরু সীমান্ত থেকে পার করা হয় দু’হাজার
টাকায়। এসব চোরাই গরু প্রথমে পাহাড়ে ও খামারে মজুদ করে চোরাকারবারিরা। পরবর্তী সময়ে
গর্জনিয়া ও চাকঢালা বাজার ইজারাদার থেকে গরুপ্রতি দু’হাজার
টাকা দিয়ে রসিদ সংগ্রহ করে খামারির গরু পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা
হচ্ছে। বাজারের রসিদ থাকায় এসব চোরাই গরু আটক করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও বিব্রতকর
অবস্থায় পড়তে হয়।
অভিযোগ রয়েছে, বাজারগুলোতে
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু লোক থাকেন। তারা গরু প্রতি এক হাজার টাকা করে চাঁদা আদায়
করে বিশেষ জায়গায় পৌঁছে দেন!
এদিকে গরু চোরা কারবারে মুনাফা
বেশি হওয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও ছুটছে সীমান্তের চোরাই পথে। মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে
কর্তব্যরত সদস্যদের মাথাপিছু ৫০০ টাকা দিয়ে গরু-মহিষ বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে। আর
এ কাজে একাধিক সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাত-দিন কাজ করছে।
পাশাপাশি সীমান্ত এলাকার
বৃহত্তর বাজারগুলো চোরাকারবারীরা কৌশলে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সেখানে অবৈধ গরু বিক্রয়
রসিদ দিয়ে বৈধ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘চোরাকারবারিদের লাগাম টানতে চোরাচালানবিরোধী টাস্কফোর্স কাজ করছে। বিজিবি চেষ্টা করছে চোরাকারবারিদের রুখতে। এর পাশাপাশি ইউএনও এবং জনপ্রতিনিধিরা আমাদের সহায়তা করছেন। আমরা সবাই মিলে চোরাচালানবিরোধী টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এটা বন্ধ করার চেষ্টা করছি।’
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স
অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মো. ইমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঈদুল আজহা সামনে
রেখে পশু কোরবানি উপলক্ষে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আসছে। এ কারণে লোকসানের শঙ্কায়
রয়েছেন হাজার হাজার খামারি। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত পথে অবৈধভাবে গরু আনা বন্ধে কঠিন
নজরদারির বিকল্প নেই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন