সাদিক অ্যাগ্রো : পর্দার আড়ালে কি মাফিয়া সিন্ডিকেট?
নিউজ আপডেট ডেস্ক :৪ জুলাই ২০২৪
• মাংস বিক্রির
জন্য ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরু জবাই করার কথা
• সেই গরুগুলোর মধ্যে ৬টি জব্দ হয় সাদিক অ্যাগ্রো থেকে
• পাওয়া যায় সাতটি ব্রাহমা বাছুর ও সিমেন বিক্রির তালিকা
• বেআইনিভাবে কৃত্রিম প্রজননের প্রমাণ পেয়েছে দুদক
দেশব্যাপী আলোড়ন তোলা সেই সাদিক অ্যাগ্রোর নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি, বেআইনিভাবে প্রজনন, লালন-পালন এবং গরুগুলোর সিমেন (বীর্য) বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে।
কারণ, বেসরকারি পর্যায়ে সরকারি অনুমোদন ছাড়া কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম নিষিদ্ধ। জানা যায়, ২০১৩ সালে বিফ-ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এ প্রকল্পের গাইডলাইনে বলা হয়, কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হবে। ফলে এ ক্ষেত্রে বেসরকারি পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনার আপাতত কোনো সুযোগ নেই। দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নির্ধারিত গাভি পালন এলাকায় মাংস বৃদ্ধির জন্য পশু পালন থেকে বিরত থাকতে হবে।
অন্যদিকে, যার মাধ্যমে ব্রাহমা জাতের গরু অবৈধভাবে দেশে আমদানি করা হয়, সেই সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনকে নিলামে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়ে কৌশলে মাংস বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হয়। কারা এই অনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, তাদেরও খুঁজছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন। নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৫টি গরুসহ ৪৮৮টি গরু জবাই এবং এর মাংস বিক্রিতে অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নেন / ছবি- সংগৃহীত
বুধবার (৩ জুলাই) দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি দল দ্বিতীয় দফায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাদিক অ্যাগ্রোর ভিন্ন এক খামারে অভিযান চালায়। সেখান থেকে ছয়টি ব্রাহমা জাতের গরু জব্দ করা হয়। পরে গরুগুলো দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার প্রতিষ্ঠানকে। ওই সময় ঢাকা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আক্তারও উপস্থিত ছিলেন।
‘গরুগুলোর
মাংস বিক্রির শর্তে ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল’—
উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আপাতত মনে হচ্ছে, এখানে জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।
বিষয়টি নিয়ে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এরপর কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী
কার্যক্রম পরিচালিত হবে।’
এ বিষয়ে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরুসহ ৪৪৮টি গবাদিপশু জবাই করে ৬০০ টাকা কেজি দরে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি করতে ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনকে নিলামের মাধ্যমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ এবং প্রতারণার মাধ্যমে ব্রাহমা জাতের গরুগুলো তার খামারে নিয়ে আসা হয়। যা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি।
তিনি
আরও বলেন, গত তিন বছর
ধরে ব্রাহমা জাতের গরুগুলো কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও
দুগ্ধ খামারে ছিল। এ অবস্থায় সেখান
থেকে কীভাবে গরুগুলোর সিমেন (বীর্য) সাদিক অ্যাগ্রোতে হস্তান্তর করা হলো, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও গরুগুলোর কৃত্রিম প্রজনন ঘটানো হলো এবং সিমেন ও বাছুর বিক্রি
করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলো— বিষয়গুলো তদন্ত করে বের করা হবে। কারণ, দুদকের অনুসন্ধানে সিমেন বিক্রির তালিকা পাওয়া গেছে, যা জব্দ তালিকার
মধ্যে রয়েছে। একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট পর্দার আড়ালে এখানে কাজ করেছে। অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন