বেনজীরের
আরও ৪০ বিঘা জমি
ও ঢাকায় সাততলা ২ বাড়ির সন্ধান , দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে
বিশেষ প্রতিবেদক:
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে। তবে ওই সম্পদের বাইরে এবার রাজধানীতে আরও দুইটি বাড়ি ও ৪০ বিঘা জমির সন্ধান মিলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে।
সেই
সম্পত্তি জব্দের অনেক আগেই বিক্রি করে হস্তান্তর ও ব্যাংকের কাছে
মর্টগেজ দেওয়ার কারণে ক্রোকের বাইরে রয়ে গেছে। এ ছাড়া পাহাড়ি
এলাকায়ও জমি ক্রয়ের তথ্য পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধান টিম। চলছে যাচাই-বাছাই ও নথিপত্র তলবের
প্রক্রিয়া।
এ
বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা
পোস্টকে বলেন, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের
যে-সব সম্পত্তি ইতোমধ্যে
তৃতীয়পক্ষ বা অন্যান্য ব্যক্তিদের
নামে হস্তান্তর করা হয়েছে, তা তদন্ত করে
দেখবে অনুসন্ধান টিম। এসব সম্পত্তি বিক্রি হয়েও থাকলেও কার নামে সম্পদ ক্রয় করা হয়েছিল, লেনদেনের প্রক্রিয়া ও কার কার
কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা
হবে।
রাজধানীর
উত্তরা-ভাটারায় দুই বাড়ি:
দুদকসহ
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে
বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে থাকা একটি প্লটে সাততলা বাড়ি করা হয়েছে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্লটটি জীশান মীর্জা পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া বলে মনে হয়েছে। তবে ভবন নির্মাণে ব্যাংক থেকে এক কোটি ৪০
লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়।
এ ঋণের জন্য বাড়িটি ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ রয়েছে। এ বাড়িটি নিয়ে
আরও অনুসন্ধান করবে দুদক।
অন্যদিকে
বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি রাজধানীর ভাটারা এলাকার আরেকটি সাততলা বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানা যায়।২০১৮-২০১৯ সালের দিকে ওই সম্পদ ক্রয়
করে ২০২১-২০২২ সালের দিকে বিক্রি করা হয়েছে। বাড়িটি কম মূল্য দেখিয়ে
অন্যের নামে হস্তান্তর করা হতে পারে বলে সন্দেহ দুদকের।
কালীগঞ্জে
৪০ বিঘা জমি:
বেনজীর
আহমেদ, তার স্ত্রী ও এক মেয়ের
নামে পূর্বাচল লাগোয়া গাজীপুরের কালীগঞ্জের তুমুলিয়ার বেতুয়ারটেক গ্রামে ৪০ বিঘা জমির
সন্ধান পেয়েছে দুদক। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা জানান,
২০১৭ ও ২০১৮ সালের
দিকে এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছিল, পরবর্তীতে সেসব সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়েছে বলে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে। এসব সম্পত্তির বিষয়ে আরও অনুসন্ধান চালিয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে তা ক্রোক বা
জব্দ করা হবে।
পাহাড়েও
জমির সন্ধান:
বান্দরবান
সদর উপজেলার সুয়ালক ও লামা উপজেলার
সরই ইউনিয়নে বেনজীর, তার স্ত্রী ও মেয়ের নামেও
একশ একরের বেশি জমি ক্রয় করেছিলেন ২০১৬ সালে। সে সময় তিনি
র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জমিতে বাগান, মাছের ঘের, গরুর খামারসহ বাগানবাড়ি করা হয়েছে বলে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে।
সার্বিক
বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ঢাকা পোস্টকে
বলেন, অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগের টিম আইন ও বিধি অনুসারে
যা যা করা দরকার
করছে। ইতোমধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, হিসেব ফ্রিজ করার আগেই টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। কতটুকু নিয়েছে, তা অনুসন্ধান কর্মকর্তারা
খতিয়ে দেখবে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা আইন-বিধি অনুসারে কাজ করছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করে আমাদের টিম কাজ করছে। অল্প সময়ে আমরা অনেক কাজ করেছি।
গত
৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের
জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের
সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন ও স্ত্রী
জীশান মীর্জা ও দুই মেয়েকে
৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।
বিভিন্ন
সূত্রে জানায়, বেনজীর ও তার পরিবারের
সদস্যদের নামের জব্দ জমি বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধে আদালতের আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট সাব
রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে। জমি অন্য কারোর নামে যাতে নামজারি না করা হয়
সেজন্য আদালতের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড
অফিসে পাঠানো হয়। এ ছাড়া কোম্পানির
মালিকানা হস্তান্তর বন্ধে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে
আদালতের ওই আদেশ পাঠানো
হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকে জমা থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধে অবরুদ্ধের আদেশ সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
গত
২৩ মে আদালতের আদেশে
সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক
হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত। অন্যদিকে গত ২৬ মে
আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের
সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি
ফ্লাট জব্দের আদেশ দেন। গত ২৩ মে
তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ
দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৬২৭
বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে।
এরই
ধারবাহিকতায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব
জব্দের আদেশ কার্যকর করা শুরু হয়েছে।
দুদক
গত ২২ এপ্রিল বেনজীর,
তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা
বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।
গত
২১ এপ্রিল প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকে আবেদন করেন হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট)
আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
ওই
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক। তিনি ৩০তম পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেছেন এবং ৩৪ বছর ৭
মাস পর অবসরে গেছেন।
২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি
অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর দেখা গেছে,
বেনজীর আহমেদ তার স্ত্রী ও কন্যাদের নামে
বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করেছেন যা তার বৈধ
আয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে অসম।--বিস্তারিত
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন